Sunday, August 9, 2020

Pandemic chronicles - 23 Jun ' 20

 23 Jun

আজ রথযাত্রা |
"রথযাত্রা, লোকারণ্য, মহা ধুমধাম,
ভক্তেরা লুটায়ে পথে করিছে প্রণাম।
পথ ভাবে আমি দেব রথ ভাবে আমি,
মূর্তি ভাবে আমি দেব–হাসে অন্তর্যামী"
স্কুল জীবনে এই লাইনগুলো নিয়ে অনেকবার ভাব সম্প্রসারণ লিখতে হয়েছে | কোনদিন 10 এ 5 এর বেশি পেয়েছি বলে মনে পড়ে না | তবে লাইন গুলো ভালো লেগেছিল বলে আজও মনে আছে | রথ বললে মেলার কথাই মনে পড়ে | না না, আজ মেলার গল্প করবো না, মেলা কাজ পড়ে আছে |
দুপুরের লাঞ্চের পরে আজ একটা গজা জুটেছে | রোজ রোজ এই খাবার, খাবার পরে ছুটে-ছুটে গিয়ে, বদ্ধ ঘরে কাজ করতে বড় ক্লান্ত লাগে | প্রতিবছর পাড়ার মন্দিরে যে রথ আসে, তার দড়িতে হাত দেবার সৌভাগ্য হয়, এবছর তাও হলো না | অগত্যা স্মৃতির ভাঁড়ারে টান পড়লো |
চাকরির প্রথম বছর | পার্কস্ট্রিট এর উপর অফিস | এ রকমই একটা রথের দিন ছিল | দুপুরের পর থেকে কারোরই আর কাজে কর্মে মন নেই দেখলাম | আমি বসতাম 8th ফ্লোরে | বলা যেতে পারে বসার জায়গা থেকে খুবই কম দূরত্বে ছিল বেশকিছু জানলা | সে জানলা দিয়ে উঁকি মারলে দেখা যেত সুদীর্ঘ পার্ক স্ট্রিটের রাস্তা |
সেদিনের একটা ছোট্ট ঘটনা আজও মনে আছে, কারণ সেদিন একটা নতুন জিনিস শিখে ছিলাম |
বিকেল তিনটের পর থেকে হঠাৎ দেখলাম জানালার পাশে জায়গা গুলো ধীরে ধীরে ভরে যাচ্ছে | অভিজ্ঞতা নেই তাই একটু সময় লাগলো ব্যাপারটা বুঝতে | প্রশ্নের চিহ্ন নিয়ে মাথায় বেশিক্ষণ ঘুরে বেড়াতে পারি না | একে তাকে জিজ্ঞেস করে বলা যেতে পারে এক প্রকার হল কালেকশনে যা বুঝলাম - এখান দিয়ে ইসকনের রথ যায় |
সে এক অভিজ্ঞতা |
রথ আসার তখনো অনেক সময় বাকি, আমার পাশে জানালাটায় আর তিল ধারণের জায়গা নেই | আমার যে কোন চান্স নেই সে আমি বুঝে গেলাম | বেশ মনমরা হয়ে কোন এক Power Plant কোম্পানির ড্রইং এর উপর মনোযোগ সহকারে রাবার স্ট্যাম্প লাগাতে লাগলাম | এই হাসবেন না কিন্তু, রাবার স্ট্যাম্প লাগানো কিন্তু কোনো সহজ কাজ নয় | এমন স্ট্যাম্প যেটা দেখবেন শুকনো খটখটে; তাতে দুই এক ফোটা জল দিলে কেমন ভাবে ব্যাপারটা যেন সজীব হয়ে ওঠে | পুরো ব্যাপারটা কিন্তু একদিনে জানা সম্ভবপর নয়, এর পিছনে কিন্তু একটা বেশ অনুশীলনী দরকার |
সেদিন আমার রথ দেখা হতোই না যদি না আমার উজ্জ্বল সহপাঠী সেদিন হেসে আমাকে জিজ্ঞেস করত - "কি করছিস রথ দেখবি না |" জানলার দিকে তাকিয়ে ইঙ্গিত করলাম আমার পক্ষে হবে না | কেমন বীরদর্পে আশ্বাসের সুরে আমাকে বলল - "আমার সাথে আয়" |
রথ দেখার লোভে চলে গেলাম | আমি যে ফ্লোরে বসতাম তার দুটো ফ্লোরো উপরে ছিল বিল্ডিং এর ছাদ | ছাদের দরজা টা যেন কেমন আলগাভাবে লাগানো ছিল, একটু ঠেলাঠেলি করতে খুলে গেল | মনে হল ও যেন কত বার এই ছাদে এসেছে |
দৃশ্যত বিশেষ কিছু ছিল না বলেই বোধহয় কেউ খুব একটা ছাদে আসতো না | কিছুক্ষণের মধ্যেই অনেক মানুষের ঢল নেমে এলো , রাস্তায় রথের চাকা ঘুরতে ঘুরতে এগিয়ে এল ঠিক অফিসের নিচে | রথে ধ্বজা উড়ে চলেছে আর তারই সঙ্গে কত মানুষ খোল করতাল বাজিয়ে হরিনাম করতে করতে এগিয়ে চলেছে | দুই বন্ধু জমিয়ে রথযাত্রা দেখলাম | রথ এগিয়ে গেছে চৌরঙ্গীর দিকে আমরাও সিঁড়ি ধরে নিচে নামছি |
বন্ধুর জন্য সেদিন রথ দেখাটা হল | ধন্যবাদ দেবো দেবো ভাবছি |
জিজ্ঞেস করলাম - "তুই কি মাঝে মাঝেই আসিস এই ছাদে?"
"অনেকদিন ধরে অফিসের ছাদটা দেখার খুব ইচ্ছে ছিল |"
"মানে, তুই ছাদ দেখতে উপরে এলি , রথ দেখতে নয় | "
"ঐ হল আর কি, রথ দেখা, কলা বেচা বলতে পারিস |”
"বলিস কি?"
"একেবারে একা একা অ্যাডভেঞ্চার করব তাই partner in crime করলাম তোকে | প্রতিবছর কি আর ছাদ থেকে রথ দেখার সুযোগ পাবি!"
কিছু মানুষ থাকে কিভাবে জানি সমস্যার ছিদ্র গুলোর মধ্যে দিয়ে সমাধানের দড়ি গুলো বেঁধে দিতে পারে | কথাটা আগে শুনেছিলাম সেদিন যেন হাতেনাতে টের পেলাম | ভাগ্যিস সেদিন জানলায় অতো ভিড় হয়েছিল, তাই ছাদের দরজাটা খোলা হল |
কিছু পুরনো স্মৃতি গজার থেকেও মিষ্টি লাগে |


No comments:

Post a Comment