Sunday, August 9, 2020

Pandemic chronicles - 5 Jul ' 20

 5 July

বৃষ্টি ভেজা সকাল |
রবিবার দুপুরে ভরপুর খেয়ে, মনের জানলা খুলে দিলাম | ভাইরাস, তুমি চলো ডালে ডালে, আর আমরা চলি পাতায় পাতায় | ঠিক ধরেছেন সোশ্যাল ডিস্টেন্স যতই বাড়ছে, সোশ্যাল কানেকশান ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে, অদ্ভুতভাবে রিলেটেড | ঠিক যেমন রবিবার দুপুর আর সিনেমা |
হইচইয়ে তানসেনের তানপুরা !
অনেক বছর এই তানসেন নামটা ছিল আমার ঠিকানার সাথে যুক্ত | তানসেনের নামে যে রাস্তা যেত, সেই রাস্তার সবচেয়ে কোনের বাড়িতে কেটেছে শৈশবের অনেকগুলো বছর | মোগল সম্রাট আকবরের নবরত্নর সাথে এভাবেই বড় হয়ে ওঠা | না, হারমোনিয়াম, তানপুরা কোনদিন কিছুই বাযায়নি | তবে ছোটবেলা থেকেই সিনেমা দেখার একটা আকর্ষণ ছিল |
পাড়ার মাঠে মেরাপ বেঁধে সিনেমা দেখানোর চল ছিল | চল ছিল যাত্রা ও থিয়েটার দেখার | একটানা 7 দিন সবকটা সিনেমা দেখলেই, হাতে যা পাওয়া যেত তার নাম ছিল সিজেন টিকিট | বাড়ির লোকেদের বিশেষ উদ্যোগ না থাকলেও ঠাকুরমা কিংবা মামার সাথে এহেন সিনেমা দেখতে গিয়েছি কয়েকবার | বেয়ারা আবদার মেটানোর জন্য বাড়িতে সব সময় কাউকে লাগে | সেই সময় সিজেন টিকিটের ছিল এক বিশাল কদর | নিজেকে সিনেমাপ্রেমী বলে অন্তত দাবি করা যেত !
টিজার বা ট্রিলার বলে তখন কিছু ছিল না | নতুন চলচ্চিত্রের পোস্টার ছাড়াও যেটা পাওয়া যেত, তার নাম হলো লিফলেট | নিস্তব্ধ দুপুরে চলচ্চিত্রের লিফলেট ছড়াতে ছড়াতে রিকশায় চেপে কেউ একজন এনাউন্সমেন্ট করতে করতে বেরিয়ে যেত | চাকরির শুরুতে অনেকে যখন জিজ্ঞেস করত – “তোমার হবি কি ?”, অনেকবার মনে হয়েছে বলি - ছোটবেলার ছুটে গিয়ে রাস্তা থেকে নতুন চলচ্চিত্রের লিফলেট কুড়োনো আমার খুব শখের জিনিস ছিল |
রান্নাঘরে জানলার তলায় একটা বিশাল বড় সিমেন্টের দেওয়াল ছিল | দেওয়ালটা ভর্তি ছিল আমার সেই কুড়িয়ে পাওয়া সব লিফলেটে | জিতেন্দ্রর হিম্মতওয়ালা থেকে মিঠুনের payar jhukta নেহি | সব ছিল এই গ্যালারিতে !
তানসেন নিজের নাম নিয়ে কালভার্টে উজ্জ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে রইল, আর আমি একটু একটু করে বড় হলাম | পড়াশোনার আবহাওয়া প্রবল হলো | সতীর্থদের ভালো লাগার সাথে এই ভালোলাগার কোথাও খুব একটা মিল পেলাম না | বাড়িতে চার চৌকো বাক্স ঢুকলো | প্রথমে সাদাকালো, তারপরে রঙিন | লিফলেটের গ্যালারি তখন অতীত |
তারপরে একদিন হলো বাড়িবদল !
নিজের ঘর ছাড়া, সবচেয়ে প্রিয় জায়গা ছিল ওই দেওয়ালটা | বেশ অনেকক্ষণ ধরে শেষবারের মতো দেওয়ালটা দেখেছিলাম | আজকের হইচইয়ের গ্যালারি থেকে কিছু কম ছিল না !
সে যাই হোক, সময় কেটেছে অনেক |
নতুন যুগের নতুন সিনেমা হল - হইচই | প্রিয়া থেকে আইনক্স হয়ে ..নেটফ্লিক্স. অ্যামাজন প্রাইম | তাদের আবার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই | আপনি দেখান তো | আর ব্যাপারটা না জানলে জেনে নিন | লজ্জার কিছু নেই | এখন বাঁচতে গেলে, প্রতিদিনই নতুন কিছু শিখতে হবে |
আপনি যাকে বলেন অনলাইন, কর্পোরেট তাকে বলে ডিজিটাল | দিকে দিকে এখন খালি ডিজিটাল প্রজেক্ট | রেশন কার্ড থেকে রেক্রিয়েশন | এই নতুন সমীকরণে নিজেকে ফিট করাও কিন্তু একটা প্রজেক্ট |
ওহো, আপনি তো সবই জানেন মশাই | তবে যদি একই সোফার কোণে বসে বসে, সিনেমা দেখতে দেখতে একটু ক্লান্ত লাগে, তাহলে একটু অন্য কিছু চেষ্টা করতে পারেন | মেঝেতে বিছানো সুন্দর কার্পেট কিংবা খালি মেঝে যাই হোক একেবারে সোজাসুজি বসে পড়তে পারেন ! মেরাপ বাধা সিনেমা হলে, এহেন আয়োজনকে বলা হতো ফরাস !
ভাবা যায় স্কুল, কলেজ, ব্যাংক, বাজার, অফিস, বিনোদন, সবকিছুই প্রায় এনিটাইম অনিওয়্যার হয়ে যাচ্ছে | শুধু সেলুন টাই নিজেকে মেন্টেন করতে হচ্ছে ! চোখ কান খোলা রাখুন আর হাতের যত্ন নিন, কারণ ডিজিটালি অপারেশনাল থাকতে গেলে হাতের প্রিসিশন থাকাটা খুব প্রয়োজন |
চুপিচুপি বলে রাখি বাড়ির বাচ্চাদের ফলো করুন, দেখবেন অজান্তেই কেমন অনেক কিছু শিখে গেছেন | ওরাতো বাই বার্থ নেটিজেন, আমরা তো চেয়ে-চিনতে পেয়েছি | তবে লেখাপড়ার ফাঁকে, আজ আকাশের চাঁদটা দেখতে ভুলবেন না !
আজ গুরু পূর্ণিমা |


No comments:

Post a Comment