Sunday, August 9, 2020

Pandemic chronicles - 14 Jun ' 20

 14 Jun

অনেকদিন পরে কাগজওয়ালা এলো বাড়িতে |
সচরাচর বাড়িতে প্রায় কেউই আসে না আজকাল | বলা ভালো বাড়ির ডোরবেলটা বাজলে আজকাল আতংক লাগে| | নিজেকে নিজের মতো গুছিয়ে নিয়েছি - হোয়াটসঅ্যাপ টেলিফোন ইমেইলের মাধ্যমে |
ঘরের এক কোণে বোঝাই হয়ে আছে অনেক খবরের কাগজ | প্রথমদিকে ভয় পেলেও ওই অভ্যাসটা ছাড়তে পারিনি| | সকালবেলা চায়ের সাথে ওইটুকুই তো আর পড়ে আছে | অনীহা সত্বেও দরজা খুলে দেখি, মুখে মাস্ক পড়ে পরিচিত মানুষটা দাঁড়িয়ে আছে ! সচরাচর ওর মুখে একটা সুন্দর হাসি থাকে, আজ আর সেটা দেখা হলো না |
হঠাৎ উঠে এসেছে দেখে মনে একটু খটকা লাগলো | বলা ভালো একটু দ্বন্দ্বেই পড়লাম | প্রথমে খানিকটা দোনামোনা করলাম, কাগজটা দেবো নাকি ওকে চলে যেতে বলব |
কেন জানিনা কড়া গলায় বললাম - "বাইরেই থাকো" |
কোন কথা না বলে, সে অক্ষরে অক্ষরে কথা গুলো পালন করল |
ঘরের বাইরে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো |
অনেক কাগজ জমেছে তাই ছোটাছুটি করে ঘরের কোণে রাখা পুরনো বাসি খবরগুলো এনে ওর সামনে ফেললাম | আমাদের বাড়ির ওজন মাপার যন্ত্র টা অনেকেরই পছন্দ, ও ব্যতিক্রম নয় | ওর জন্য বরাবরই ওজন যন্ত্র আমরা আনি | প্রথমবার, আমরা চোখের আন্দাজেই ওজনটা মাপলাম | বলা যায় চোখের পলকে কাজটা আমরা সেরে ফেললাম; সেও বস্তা গুটিয়ে চলে গেল |
যাক বাবা বাঁচা গেল ! তবে ভাবনাটা সাময়িক, কারণ শোনা যাচ্ছে ভাইরাস রোবটের স্পিডে নানান গতিতে নানান ভাবে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে |
সব প্যারামিটারে ভাইরাস বাবাজীবন বেশ তুখর !
অ্যাকুরেসি, প্রিসিশন, স্কেল, পেনিট্রেশন, কভারেজ, কোনকিছুই নজর এড়ায়নি | লক্ষণীয় জাতি, ধর্ম ,দেশ সব একসাথে ব্যাংক-অন লঞ্চ করেছে | যে স্কুলে পড়ে থাকুক না কেন, ট্রেনিং টা খাসা | না না ,তবু তোমাকে আমার একদম ভালো লাগে নি | আমার তো আর তোপসে নেই, তাই আপনাদেরই বলি - আর শান্তিতে থাকা যাচ্ছে না |
পুরনো খবরের বোঝা নিয়ে কাগজওয়ালা তো কত দূর চলে গেল | ঘরের কোন টা ফাঁকা হলো ঠিকই, কিন্তু মনের কোণে ধুলো জমেছে |
চলে যাবার পরে বেশ কিছুক্ষণ মনটা খুব খারাপ ছিল | এরকম তো করিনা , কেউ এলে তার সাথে দুটো কথা বলি | এরকম ভাবে পালিয়ে বেড়ানো একটা অসুখে দাঁড়িয়েছে |
আবার দরজা বন্ধ, আর কেউ আসেনা, আবার সেই দিন গোনার পালা |
ইস, ওকে জিজ্ঞেস করতেই ভুলে গেলাম ঈদের পরব কেমন কাটল ; এই সময় এলে অনেক ভালো গল্প করতো, সেসব আর করাই হলো না | সবই অধরা বিচিত্র প্রাণীটার জন্য | আমার কাউকে একটা চাই দোষ দেবার জন্য তাই তোকেই দিলাম |
পুঁজিপুথি আর ক'জনইবা থাকে,যাদের আছে তাদের নাম সকলেই জানে | আর যাদের নেই তাদেরতো ছিল শুধু এইটুকু সামাজিক সম্পর্কের সম্বল | তা তুই সেটাও কেড়ে নিলি.. Not done..
তবে একটা দৃষ্টিকোণ উপেক্ষা করতে পারছিনা | সে যাই বলুন, ভাইরাস বেশ রসিক বটে | মানুষের ভিতরের মুখোশ গুলো যেন কেমন জ্বলজ্বল করে ফুটে উঠছে | তাই দেশের মানুষও পারিজায়ী হয় , কে কাকে ত্রাণ সামগ্রী দিল সেটা ত্রাণের চেয়ে বড় হয় | মানুষের কান্না আর পলিটিক্যাল তরজা সমান্তরাল হয়ে ছুটে চলে |
চলতে চলতে একদিন পথ যাবে বেঁকে | সময়ের সাথে সাথে হয়তো তুইও যাবি কোথাও মিলিয়ে | আর যাই করিস ভালোমানুষিটা কেড়ে নিস না |
সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি ,
সারাদিন যেন আমি ভালো ভাবে চলি ||


No comments:

Post a Comment